লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর। বিশ্বকাপ ফুটবলের পুরোটা সময়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয় উজাড় করা উচ্ছ্বাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে বেশ জোরালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছে।
ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলাধুলা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস রয়েছে সুদীর্ঘকাল ধরেই। একসময় মোহামেডান-আবাহনীর খেলার দিন দুই ভাগ হয়ে যেত সমগ্র দেশ। অথচ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ফুটবলের অবস্থান দিন দিন তলানির দিকে যাচ্ছে। অনেক কারণ আছে এই ক্রমাবনতির, কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে খেলোয়াড় তৈরি হবে যেই মাঠে, পাড়া-মহল্লার সেই খেলার মাঠ কতটা অবশিষ্ট আছে?
শুধু খেলোয়াড় তৈরিই নয়, আমাদের শিশু-কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং সামাজিকীকরণ তথা সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য খেলাধুলার সুযোগ ও খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অথচ কি শহর, কি গ্রাম—খেলার মাঠের সংকট দেশজুড়েই। অবকাঠামোগত উন্নয়নতত্ত্বের আড়ালে আমরা কি খেয়াল করছি খেলাধুলাবিহীন আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে কীভাবে?
শিশুদের বিষণ্নতা, কিশোর অপরাধ ও খেলার অধিকারের বঞ্চনা
খেলার মাঠ আমাদের সামাজিকীকরণ বাড়ায় ও উদারচিত্ত হৃদয়ের মানুষ গড়তে সহায়তা করে। সমাজকল্যাণ, মনোবিদ্যা এবং অপরাধ-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর-তরুণদের দ্বারা অপরাধের মাত্রার সঙ্গে খেলার মাঠের সুবিধা, পার্কের সংখ্যা, খোলা জায়গার পরিমাণ প্রভৃতির উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যেসব কিশোর অপরাধ ও কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব দেখতে পাই, তার পেছনে আমাদের শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগের অভাবের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
একই সঙ্গে আমাদের শিশু-কিশোরদের স্থূলতাসহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা এবং বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন মানসিক অবসাদের পেছনেও খেলাধুলার সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত করার দায় আছে। আমাদের শিশু-কিশোরেরা মোবাইল গেমস কিংবা স্মার্ট ডিভাইসে আসক্ত; কিশোর-তরুণদের অনেকেই মাদকাসক্ত।
অথচ এসব ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির অনেকটা সমাধান সম্ভব ছিল শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ করে দিয়ে। অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে গিয়ে নগর এলাকায় একের পর এক খেলার মাঠ ধ্বংস করা হচ্ছে। অথচ আমরা শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক মূল্য নিরূপণ করতে বেমালুম ভুলে গেছি।
মাঠ শুধু বিনোদন নয়, স্বাস্থ্য অবকাঠামোও বটে
খেলার মাঠকে আধুনিক নগর-পরিকল্পনায় বিনোদনসুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ১ ঘণ্টা করে খেলাধুলা ও শারীরিক সক্রিয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা (খেলার মাঠ, পার্ক ইত্যাদি) থাকা উচিত। এই হিসাবে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য সোয়া দুই একর খোলা জায়গা এবং এক একর খেলার মাঠের প্রয়োজন। টেকসই নগরায়ণ-সংক্রান্ত জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন-হ্যাবিটেটের মতে, হাঁটা দূরত্বে খেলার মাঠ, সবুজ এলাকা থাকা উচিত।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী যেকোনো আবাসন এলাকার ন্যূনতম ১০ ভাগ খেলার মাঠ-পার্ক প্রভৃতি বিনোদন সুবিধার জন্য বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। অতি ঘন নগর এলাকায় প্রতি অর্ধবর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা বিবেচনায় ন্যূনতম একটি খেলার মাঠ থাকা প্রয়োজন।
আমাদের খেলার মাঠগুলো কেমন আছে
আমাদের অনেকের কাছে হয়তো ঢাকার তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা করার গল্পটি স্মৃতির পাতাতে প্রবলভাবেই উজ্জ্বল আছে। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে শিশু-কিশোরেরা তাদের খেলার জায়গাকে রক্ষা করতে পেরেছে, সেই অণুগল্পটা অনুপ্রেরণার। কিন্তু বাংলাদেশের নগর কিংবা গ্রামীণ এলাকায় এমন অনেক খেলার মাঠ আছে, যেগুলো ভবন বা অবকাঠামো নির্মাণের কারণে কিংবা বেপরোয়া উন্নয়ন স্পৃহা অথবা নগরায়ণের চাপে আর রক্ষা করা যায়নি।
রাষ্ট্র ও সরকারের চোখের সামনেই অনেক খেলার মাঠ কোনো ক্লাব বা প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে দখল করে রেখেছে। খেলার মাঠের উন্নয়নের নামে খেলার মাঠে ইট-কংক্রিটের কাঠামো দিয়ে ঢেকে ফেলা কিংবা আস্ত একটা খাঁচা বানিয়ে ফেলে খেলার মাঠের সর্বজনীন চরিত্রকে বিসর্জন দেওয়ার উদাহরণগুলোও সাম্প্রতিক সময়েরই। মোটা দাগে অবাধে খেলাধুলা করার অধিকারকেও আমরা সংকীর্ণ ও বৈষম্যমূলক করে ফেলেছি গত কয়েক দশকে।
গ্রামীণ এলাকাতেও খেলাধুলার সংকট
বিস্ময়কর বাস্তবতা হচ্ছে, নগরের মতো গ্রামীণ এলাকাতেও খেলার মাঠের সংকট তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় শিশু-কিশোরেরা সাধারণত খেলাধুলা করে থাকে অনানুষ্ঠানিক জায়গায়। পতিত কৃষিজমি, বাড়ির উঠান-আঙিনা কিংবা বাড়ির আশপাশের খোলা চত্বর বা প্রাঙ্গণ, কিংবা ফসল কাটার পর খানিক অবসর যাপনকালীন ধানখেতের মাঝেই আমাদের গ্রামীণ জনপদের শিশু-কিশোরেরা খেলার চাহিদা মেটায়। এসব খেলার জায়গায়ও আবার ফসলের ভরা মৌসুম কিংবা বন্যার সময় খেলার সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়।
আমাদের গ্রামীণ এলাকায় পরিকল্পিত খেলার মাঠ নেই, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ এ ক্ষেত্রে বিনোদন-সুবিধার চাহিদা পূরণ করে। গ্রামে মেয়েদের খেলার মাঠ না থাকার কারণে মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ অপ্রতুল।
নগর এলাকায় খেলার মাঠের সংকট
পরিকল্পনার সূচক সম্পর্কিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত টাইম সেভার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য ০.৫ থেকে ১ একর আয়তনের ‘প্লে লট’ (৩-৬ বছর বয়সী শিশুদের খেলার মাঠ), ১.৫ থেকে ৩ একরের ‘প্লে-গ্রাউন্ড’ (৭-১৫ বছর বয়সী কিশোরদের খেলার মাঠ), ১.৫ থেকে ১৫ একর আয়তনের ‘প্লে-ফিল্ড’ (১৫-ঊর্ধ্ব বয়সীদের খেলার মাঠ) থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের নগর-পরিকল্পনায় এই তিনটি বয়স ক্যাটাগরির শিশু-কিশোরদের জন্য তিন ধরনের খেলার মাঠের পরিকল্পনা করার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) সম্প্রতি এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নগর এলাকার জনসংখ্যার আকার ও ধরন অনুযায়ী নগর এলাকায় খেলার মাঠের তীব্র সংকট আছে উল্লেখ করে বলা হয়, নগর-পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী ঢাকা মহানগরে ৭৯৫টি, চট্টগ্রামে ৫৪১টি, রাজশাহীতে ৩৭টি, খুলনায় ৬৫টি, সিলেটে ৪০টি ও বরিশালে ৪৫টি খেলার মাঠের ঘাটতি রয়েছে।
আছে দখলও
ঢাকা শহরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০১০) অনুসারে, প্রতি সাড়ে ১২ হাজার মানুষের জন্য ২ থেকে ৩টি খেলার মাঠ দরকার, যার প্রতিটির আয়তন হবে ন্যূনতম এক একর। সে হিসাবে ঢাকা শহরে খেলার সুবিধা নিশ্চিত করতে হাজারখানেক খেলার মাঠ প্রয়োজন।
অথচ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০১৯ সালের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে খেলার মাঠ আছে ২৩৫টি, যার অধিকাংশই (১৪১) প্রাতিষ্ঠানিক মাঠ, যেখানে এলাকাবাসী তথা সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। বিদ্যমান বেশ কিছু খেলার মাঠ বিভিন্ন ক্লাবের নামে দখল হয়ে আছে, যেখানে পাড়া-মহল্লার শিশু-কিশোরদের অবাধ প্রবেশাধিকার নেই, অনেক ক্ষেত্রেই খেলার কোনো সুযোগ নেই। অনেক খেলার মাঠ আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়ার ফলে শিশু-কিশোরদের খেলার জন্য কোনো সুযোগ আর থাকে না।
ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় সবার জন্য প্রবেশাধিকার আছে এমন মাঠ আছে মাত্র ৪২টি এবং বিআইপির গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকা শহরের মাত্র ১৬ শতাংশ এলাকার মানুষ খেলার মাঠের পরিষেবার মধ্যে বসবাস করেন এবং অবশিষ্ট ৮৪ শতাংশ এলাকার মানুষ খেলার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চট্টগ্রাম শহরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোর ৬৫ শতাংশেই খেলার মাঠ নেই।
বিদ্যালয়গুলোতেও আছে খেলার মাঠের সংকট
যেকোনো বিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য খেলার মাঠ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের পাড়া-মহল্লায় খেলার মাঠের সুযোগ একেবারেই সীমিত হওয়ার কারণে অনেক শিশু-কিশোর-কিশোরীর জন্য বিদ্যালয়ের খেলার মাঠই শুধু খেলাধুলার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ‘অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস ২০২১’ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এর মধ্যে ১০ হাজার ৭৪০টি তথা ২০ শতাংশ বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, কক্সবাজার, নওগাঁ, বান্দরবান, বাগেরহাট প্রভৃতি জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠের সুযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকলেও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ প্রায়ই অনুপস্থিত। আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ীও প্রতিটি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ থাকার কথা। খেলার মাঠ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনই পাওয়ার কথা নয়।
খেলার মাঠ ও খেলাধুলার সুযোগ বাড়াতে করণীয়
আমাদের শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ বাড়াতে গ্রামীণ এলাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে ছেলে ও মেয়েদের জন্য একটি করে খেলার মাঠ পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুলতে হবে। ভূমি ব্যাংক তৈরির মাধ্যমে ও ভূমি অধিগ্রহণপূর্বক পর্যায়ক্রমে প্রতিটি গ্রামীণ ও শহর এলাকায় খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করা দরকার। বিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির সময় আবশ্যিকভাবে খেলার মাঠের সংস্থান করতে হবে। বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খেলার মাঠ গড়ে তুলতে হবে।
উন্নয়নের পর খেলার মাঠে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে এলাকার শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে ব্যবস্থাপনা কমিটি তৈরি করতে হবে। স্বল্পবিত্ত বা বস্তি এলাকায় খেলার সুযোগ তৈরি ও সেসব রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। খেলার মাঠ উন্নয়ন প্রকল্পে কংক্রিট ও অপ্রয়োজনীয় স্থাপনার সংযোজন রোধ করে পরিবেশবান্ধব ও কার্যকর ডিজাইন পরিকল্পনা করতে হবে। বিভিন্ন ক্লাব ও মহলের কাছ থেকে জনগণের খেলার মাঠ জনগণের সর্বজনীন ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। ছোট, মাঝারি ও বড় শহরের জন্য চাহিদা বিশ্লেষণপূর্বক খেলার মাঠের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।
খেলার মাঠের জন্য প্রয়োজন মহাপরিকল্পনা
বর্তমান সরকারের ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ প্রকল্প ও উপজেলা পর্যায়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের যে উদ্যোগ চলমান আছে, তার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক খেলার মাঠ তৈরি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকারিভাবে সারা দেশের নগর ও গ্রামীণ এলাকায় খেলার মাঠের পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘খেলার মাঠের পরিকল্পনার সূচক বা মানদণ্ড (প্ল্যানিং স্ট্যান্ডার্ড)’ ও ‘খেলার মাঠের নীতিমালা’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
বিশ্বের অনেক দেশেই খেলার মাঠসহ গণপরিসর পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পৃথক সংস্থা থাকে। আমাদের দেশের খেলার মাঠ-পার্ক-গণপরিসর রক্ষণাবেক্ষণে সুনির্দিষ্ট সংস্থা গঠনের মাধ্যমে সব নাগরিকের জন্য খেলার মাঠসহ গণপরিসর সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার।
রাষ্ট্রের দায়
শিশু-কিশোর এবং নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার জন্য খেলার সুবিধা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ওয়ার্ডভিত্তিক খেলার মাঠের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক খেলার মাঠ তৈরি করা সম্ভব। এ ব্যাপারে নগর কর্তৃপক্ষসমূহের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জনসাধারণের প্রাণের দাবি—এ বিষয়ে উদাসীনতা দেখানোর আর কোনো সুযোগ নেই।
২০১৪ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে দেশের সব খেলার মাঠ ও পার্ক রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই—এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোও যেন উদাসীন।
ফলে অসংখ্য মাঠ এখন অস্তিত্ব-সংকটে আছে। আর মাঠ দখলের সঙ্গে আছে রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী লোকজন, যাঁদের পেশিশক্তির কাছে অনেক ক্ষেত্রেই এলাকাবাসী ও সাধারণ জনগণ অসহায়। তারপরও শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ আমাদের প্রাণের সম্পদ আর রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কারিগরদের রক্ষা করতে এখনই এলাকাভিত্তিক সবার জন্য উন্মুক্ত খেলার মাঠ তৈরি করতে হবে। উন্নয়নের মনস্তত্ত্বের বাঁক বদল আর যথাযথ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগই আমাদের শিশুদের খেলার মাঠের সবুজ চত্বরে ফেরাতে পারবে।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ প্রথম আলো