কুড়িগ্রামে ১ হাজার ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৫৬২টি বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই।
সংবাদদাতা, কুড়িগ্রামঃ ঢেকিরাম মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ওলি (১০)। ফুটবল হাতে বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যে বল দেয়ালে ছুড়ে দিয়ে আবার ধরছেন। এটাই তার খেলা। টিফিনের বেশির ভাগ সময় তার এভাবেই কেটে যায়। কারণ, তার স্কুলে কোনো খেলার মাঠ নেই। মাঠ না থাকায় তার বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় না।
উলিপুরের ঢেকিরাম মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ৩৩ শতক। ২০২০ সালের জন্য নতুন ভবন হলে বিদ্যালয়ের সামনে আর কোনো খেলার মাঠ অবশিষ্ট নেই। এই বিদ্যালয়ের মতো উপজেলার ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। ফলে ওলির মতো হাজার হাজার শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যেমন খেলাধুলা করতে পারছে না, তেমনি বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রম ও প্রাত্যহিক সমাবেশেও অংশ নিতে পারছে না।
উলিপুর উপজেলার নাটির খামার সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশাপাশি নেই বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তা। স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি বিদ্যালয়ের রাস্তার জমি দখলে রেখেছেন। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ধানখেতের আইল দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে।
উপজেলার কিশামত মালতিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাগজে-কলমে জমির পরিমাণ ৬০ শতক। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলের পর সরেজমিনে জমির পরিমাণ ৩৫ শতক। যার মধ্যে ৬ শতক পুকুর, বাকি ২৯ শতক ভবন নির্মাণের পর বাকি অংশ বিদ্যালয়ের উঠান। বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর না থাকায় সেখান দিয়েও নিত্য হালচাষের গরু, ভ্যান, রিকশা যাতায়াত করে।
১৯৮৪ সালে স্থাপিত হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর মিয়াজী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ২৬৫ জন। কাগজে-কলমে জমির পরিমাণ ৩৩ শতক হলেও সরেজমিনে বিদ্যালয়ের দখলে আছে মাত্র ১০ শতক পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের ভবনের সীমানাসংলগ্ন ধানখেত। বিদ্যালয় ভবন ছাড়া কোনো খালি জায়গা নেই। জাতীয় সংগীতসহ সমাবেশের কার্যক্রম চলে শ্রেণিকক্ষে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১ হাজার ২৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থী রয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৮০৬ জন। এর মধ্যে কাগজে-কলমে ১ হাজার ১৭০টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ আছে উল্লেখ থাকলেও সরেজমিনে প্রায় ৫৬১টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুদের শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশে খেলার মাঠ জরুরি। জেলায় অনেক স্কুলে কাগজ–কলমে জমির পরিমাণ যা আছে, তা দখলে নেই। আমরা সেগুলোর একটা তালিকা করে ব্যবস্থা নেব। আর যেসব বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, তার তালিকা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের পাঠাব।’
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ প্রথম আলো