ফুটবল খেলে মাঠ রক্ষার দাবি জানাল শিশু-কিশোরেরা

Visits:738

মাঠের চারদিকে দাঁড়িয়েছে শিশু–কিশোরের দল। তাদের হাতে ফেস্টুন আর ব্যানার। সেখানে লেখা খেলার মাঠের দাবিতে নানা স্লোগান। মাঠের মধ্যে চলছে ফুটবল খেলা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়াহাটের চোঙ্গাখাতা এলাকার একটি খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় শিশু-কিশোর ও এলাকার মানুষ।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গড়েয়াহাটের চোঙ্গাখাতা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের চারপাশে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে নানা বয়সের শিশু, নারী-পুরুষ। মাঠের মধ্যে একদল শিশু-কিশোর ফুটবল খেলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চোঙ্গাখাতা এলাকার খোলা জায়গাটি খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দারা শিশুদের খেলাধুলার পাশাপাশি সেখানে সামাজিক, ধর্মীয়সহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। গত জুন মাসে স্থানীয় ফখরুল ইসলাম ও সজল কুমার চৌধুরী নামের দুই ব্যক্তি মাঠটি কিনে নেওয়ার দাবি করেন। এরপর তাঁরা লোকজন নিয়ে মাঠটি দখলের চেষ্টা করেন। মাঠটি দখলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে মালিকানা দাবিকারী ব্যক্তিরা স্থানীয় শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষের নামে কয়েকটি মামলা করেন। মামলায় স্থানীয় দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। তাঁরা এখন জামিনে রয়েছেন। এর পর থেকে এলাকাবাসী খেলার মাঠটি রক্ষার দাবিতে নানা কর্মসূচি আয়োজন করে আসছেন।

চোঙ্গাখাতা গ্রামের অতুল চন্দ্র রায়ের বয়স ৬০ বছর। ছোটবেলায় এই মাঠে নিজের খেলার স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, এখন বয়স্ক স্থানীয় যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রায় সবারই এই মাঠের স্মৃতি আছে। এই মাঠ যদি দখল হয়ে যায়, তাহলে এখনকার বাচ্চারা কোথায় যাবে?

স্থানীয় বাসিন্দা মমতা রানী (৬৫) দাবি করেন, মাঠটি ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূজা–অর্চনার আয়োজন করে আসছেন। মাঠটি হারালে সেসব অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।

আরেক অভিভাবক পলি রানী রায় বলেন, শিশুরা এখন প্রচণ্ড পরিমাণে মুঠোফোনে আসক্ত। তাদের দোষও দেওয়া যায় না। এভাবে খেলার মাঠ দখল হয়ে গেলে শিশু-কিশোরেরা কোথায় যাবে। কারও মালিকানায় না রেখে মাঠটি স্বতন্ত্র রাখার দাবি জানান তিনি।

মাঠে ফুটবল খেলার ফাঁকে গড়েয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মন্দ্রীপ রায় বলে, ‘বিকেল হলে এই মাঠে এসে আমরা খেলাধুলা করি। কিন্তু মাঠটি দখল হয়ে যাচ্ছে। এমনটা হলে আমরা খেলব কোথায়?’

গড়েয়া মডেল স্কুলের পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মাঠটিতে আশপাশের বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাঠটি হারালে সেই অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ হারাব।’ তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের ভূমিসহ ঘর দিচ্ছেন। শিশুরা যেখানে খেলাধুলা করছে, সেই মাঠটি প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে দান করবেন বলে আশা করছেন তিনি।

গড়েয়াহাটের ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাসে মাঠটি কেনার দাবি করে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ভাড়াটে লোকজন এনে মাঠটি দখলের চেষ্টা চালান। কিন্তু তাঁদের বাধা দিলে এলাকাবাসীর নামে তাঁরা হয়রাননিমূলক চারটি মামলা করেন। মামলায় শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়।

এ বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, বৈধভাবেই মাঠটি কেনার জন্য বায়নানামা করেছেন তাঁরা। এলাকার কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি অনৈতিকভাবে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাঁরা এখন মাঠ রক্ষার নামে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জমির বায়নানামার পেছনে তাঁদের যে খরচ হয়েছে, তা পুষিয়ে দিয়ে প্রশাসন যদি সেটা খেলার মাঠ হিসেবে রাখতে চায়, তবে তাঁরা সহযোগিতা করবেন।

জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা মাঠটি পরিদর্শন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আবারও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আশা করছেন, দ্রুত সমস্যাটির সমাধানের পথ বের হবে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ প্র্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *