শিশুকে ওষুধ খাওয়াতে সাবধান

Visits:713

আফিফা তাবাসসুমঃ অসুখ হলে ওষুধ খেতেই হবে। অথচ শিশুকে ওষুধ খাওয়াতে বাবা-মায়ের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। আবার ওষুধভেদে খাওয়ানোর তরিকাতেও পার্থক্য রয়েছে। তাই শিশুর ওষুধের ব্যাপারে বিশেষ সচেতন হতে হবে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আফিফা তাবাসসুম

ওষুধ খাওয়ানোর আগে

শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর আগে পরিমাপক কাপ ও চামচ, মুখে ব্যবহার করার সিরিঞ্জ, ওরাল ড্রপারস প্রভৃতি ভালো করে জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ওষুধের মাত্রা এবং মাত্রা নিরূপণের দাগগুলো ভালো করে বুঝে নিন। ওষুধ খাওয়ানোর জন্য সাধারণ চামচ ব্যবহার করবেন না। এসব চামচে পরিমাপক দাগ না থাকায় ওষুধের পরিমাণ কমবেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষে শিশুকে যত্ন নিয়ে ওষুধ খাবার জন্য মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকেই শিশুরা চারপাশের নানা ঘটনা বুঝতে চেষ্টা করে। তাই শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর আগে যে কাপে বা চামচে ওষুধ খাওয়াবেন সেটা প্রথমে নিজে খাবার অভিনয় করে শিশুকে দেখান, যেন সে বুঝতে পারে এ খাবারটি খেতে কোনো ভয় নেই। শিশুর জন্য সাধারণত মিষ্টি স্বাদের ওষুধ বেছে নেন চিকিৎসকরা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছ থেকেই জেনে নিন ওষুধের স্বাদ কেমন এবং কীভাবে শিশুকে খাওয়াবেন।

বয়স অনুযায়ী ওষুধ

সাধারণত পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের জন্য তরল ওষুধ বা সিরাপ দেওয়া হয়। এর চেয়ে বেশি বয়স হলে চুষে বা পানিতে গিলে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া যায়। দুই বছরের ছোট শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর সময় একটু একটু করে ঠোঁটের কোনার দিকে চামচ দিয়ে ওষুধ দিন। শিশু ওষুধের স্বাদ অপছন্দ করলে বা খেতে না চাইলে অন্য কোম্পানির তৈরি একই গ্রুপের ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। কেননা, ওষুধে একেক কোম্পানি একেক রকম স্বাদ ও গন্ধ ব্যবহার করে। তাই শিশু পছন্দ করবে এমন স্বাদের ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিটি ওষুধ সেবনের নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে তার ওষুধ প্রদান করুন। খাবারের আগে বা পরে, খালি পেটে ইত্যাদি যে নির্দেশনাটিই প্রদান করা হোক না কেন, তা মেনে চলুন।

জোর বা মিথ্যা নয়

শিশু না চাইলে কোনোভাবেই তাকে জোর করবেন না। জোর করলে ওষুধ গলায় আটকে যেতে পারে। চেষ্টা করুন শিশুকে বুঝিয়ে, শান্ত করে ওষুধ খাওয়াতে। ছোট্ট শিশুদের খেলাচ্ছলে এবং তিন বছরের বড় শিশুদের নানাভাবে বুঝিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে তাকে ভিডিও বা কার্টুন দেখিয়ে অসুখ হলে ওষুধ খাবার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা দিন। বড়রা ওষুধ খাবার সময় শিশুদের বলুন কেন ওষুধ খাচ্ছেন এবং ওষুধ খেলে কী উপকার। অনেকেই শিশুকে ওষুধ চকলেট বা মজার খাবার এ ধরনের মিথ্যা বলে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে পরে শিশু সাধারণ খাবার ভেবে নিজেই সেটি খেয়ে ফেলতে পারে। তাই শিশুকে অবশ্যই ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বোঝাতে হবে।

লক্ষ করুন

  • ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনার সময় ওষুধের প্যাকেট ঠিক আছে কিনা, সেটার মেয়াদ ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিন।
  • অনেক সময় শিশুদের ঘরে থাকা ওষুধ খাইয়ে দেন বাবা-মা। ওষুধ সবার জন্যই অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি জিনিস। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তো বটেই। তাই একবার ব্যবহার করা ওষুধ এক মাস পার হলে ফেলে দিন।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বড়দের ওষুধ শিশুকে দেবেন না। শিশুকে যে কোনো ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও তার পরামর্শ নিন।
  • ওষুধ খাওয়ানোর সময় মেনে চলুন। দিনে দুবার হলে ১২ ঘণ্টা পরপর এবং চারবার হলে নিয়ম করে ৬ ঘণ্টা পরপর ঘণ্টা হিসাব করে ওষুধ দিন।
  • শিশুকে ওষুধ দেওয়ার আগে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন। এতে শিশুর অ্যালার্জি বা অন্য কোনো সমস্যাকে বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উপাদান ওষুধে থাকলে সেটা এ ক্ষেত্রে খুব সহজেই এড়িয়ে চলতে পারবেন আপনি।
  • শিশুর ওষুধ কীভাবে, কোথায় ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যাবে যেটাও জানুন। কোনো ওষুধই শিশুর নাগালে রাখবেন না।
  • শিশু ওষুধ খাওয়ার পর বমি করে ফেললে তাকে আবার ওষুধ না দিয়ে আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ দৈনিক কালবেলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *