শিশুদের কিছু সমস্যার কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তির স্বাভাবিকতা ব্যাহত হতে পারে। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে—দৃষ্টিস্বল্পতা, জন্মগত ছানি, ট্যারা চোখ, জন্মগত গ্লুকোমা,চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা সমস্যাগুলো বলতে বা বুঝতে পারে না। তাই অভিভাবকের উচিত কিছু বিষয় লক্ষ রাখা। শিশুর চোখের সমস্যা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ মো. আমির হোসেন
দৃষ্টিস্বল্পতা
শিশুর দৃষ্টিস্বল্পতা বুঝতে হলে খেয়াল করুন সে কিছুটা দূর থেকে বোর্ডের লেখা বোঝে কিনা। টেলিভিশন দেখা বা বোর্ডের লেখা পড়ার সময় চোখ ছোট করে তাকায় কিনা। কাছ থেকে টিভি দেখা বা বই মুখের কাছে এনে পড়াও দৃষ্টিস্বল্পতার লক্ষণ। এ ছাড়া পড়ার সময় চোখে ব্যথা অনুভব, মাথাব্যথা, বাঁকা করে বা ট্যারা চোখে তাকানো, কপাল ও চোখ কুঁচকে দেখার চেষ্টা করলেও অভিভাবককে সতর্ক হতে হবে।
এ ধরনের সমস্যায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রথম কাজ। সাধারণত যথাযথ পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করলে এ অসুবিধাগুলো চলে যায়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ারের পরিবর্তন ঘটতে পারে। তাই ছয় মাস অন্তর শিশুদের চোখ পরীক্ষা করা উচিত। আর শিশু যেন ঘুমের সময় ছাড়া বাকি সময় চশমা ঠিকমতো ব্যবহার করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
জন্মগত চোখের ছানি
ছানি সাধারণত বেশি বয়সে হয়। কিন্তু অনেক শিশু চোখে ছানি নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। আবার অনেক সময় শিশুরা জন্মের পর অল্প বয়সেই ছানিতে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। চোখের ড্রপ বা চশমা দিয়ে ছানি রোগের চিকিৎসা হয় না। শিশুর বয়স, ছানির ধরন, চোখের অন্যান্য রোগ এবং শিশুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অস্ত্রোপচারের ধরন ঠিক করা হয়। দুই বছর বা তার বেশি বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে ছানি অস্ত্রোপচার করে লেন্স সংযোজন করা হয়। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আরও কম বয়সের শিশুদেরও অস্ত্রোপচার করে লেন্স সংযোজন করা হয়। নবজাতক শিশুর দুই চোখে ছানি থাকলে তা দ্রুত অস্ত্রোপচার করা জরুরি। শিশুর বয়স দু-তিন মাসের মধ্যেই তা করতে হবে। অস্ত্রোপচারের পরও ভবিষ্যৎ ভালো দৃষ্টির জন্য সব শিশুরই চশমার প্রয়োজন হবে এবং চশমার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিত্রুটি দেখা দেয়, যা নিয়মিত পরীক্ষা ও চশমা পরিবর্তন করে নিলে শিশু অন্ধত্বের হাত থেকে রেহাই পেতে পারে।
ট্যারা চোখ
ট্যারা চোখে দুই চোখ দুটি ভিন্ন দিকে অবস্থান করে বা বাঁকা হয়ে থাকে। চোখের এরকম অবস্থা স্থায়ীভাবে থাকতে পারে অথবা মাঝেমধ্যে দেখা যেতে পারে। ট্যারা চোখটি ওপরে, নিচে, ভেতরের দিকে অথবা বাইরের দিকে বাঁকা হয়ে থাকতে পারে। ট্যারা চোখের চিকিৎসা সময়মতো না হলে দৃষ্টিস্বল্পতা এবং পরবর্তী সময় অলস চোখজনিত (লেজি আই) দৃষ্টিহীনতা হতে পারে।
শিশুর চোখ ট্যারা বা ট্যারা বলে মনে হলে বিলম্ব না করে তখনই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যদি ট্যারা চোখের চিকিৎসা এক-দুই বছরের মধ্যে করা যায়, তবে দৃষ্টিহীনতা প্রতিরোধ করা যায়। শিশু যত বড় হতে থাকে ট্যারা চোখের চিকিৎসা ও ত্রুটি সারানো তত কঠিন হতে থাকে। চোখের জন্য উপযুক্ত চশমা দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্যারা চোখ ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।
জন্মগত গ্লুকোমা
গ্লুকোমা একটি জটিল রোগ, যা স্নায়ু ও রেটিনার ক্ষতি করে এবং দৃষ্টির ব্যাপ্তি হ্রাস করে ধীরে ধীরে অন্ধ করে দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মগত গঠন ত্রুটিজনিত চোখের উচ্চচাপ জন্মগত গ্লুকোমার মূল কারণ। সাধারণত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্মগত গ্লুকোমার চিকিৎসা করা হয়। জন্মগত গ্লুকোমা হলে যে লক্ষণ থাকে তার মধ্যে আছে—চোখের কর্নিয়া স্বাভাবিকের চেয়ে বড় থাকা, চোখের আকার বড় হওয়া, পানি পড়া, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, চোখের কর্নিয়া জন্মের সময়ই সাদা থাকা, চোখের সাদা অংশ লালচে বা নীলাভ হওয়া।
পানি পড়া
জন্মগতভাবে শিশুদের নেত্রনালি বন্ধ থাকার কারণে, চোখে কোনো সংক্রমণ হলে কিংবা চোখের মধ্যে কিছু পড়লে চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। পানি পড়ার পাশাপাশি চোখে ময়লা জমে বা চোখ চুলকাতে পারে।
সাধারণত নির্দিষ্ট উপায়ে নিয়মিত চোখের একটি ব্যায়াম (ম্যাসাজ) করলে এ সমস্যা ভালো হয়ে যায়। চোখের কোনা এবং নাকের গোড়ার মিলনস্থলে তর্জনীর সাহায্যে ওপর-নিচ করে এ ব্যায়াম করতে হয়। আর চোখে ময়লা এলে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হয়।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ দৈনিক কালবেলা